সকল প্রতিবন্ধকতাকে পেছনে ফেলে আলোকিত হওয়ার জন্য জ্ঞানের যুদ্ধে নেমে দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডের আওতায় এসএসসিতে ‘এ-‘ ও ‘বি’ গ্রেডে উত্তীর্ণ হয়েছেন লালমনিরহাটের খন্দকার নাবিলা তাবাসসুম ও মুন্নী আক্তার নামের দুই দৃষ্টিহীন শিক্ষার্থী।
জীবনযুদ্ধে জয়ী হওয়ার স্বপ্নে বিভোর দৃষ্টি প্রতিবন্ধী এই দুই শিক্ষার্থী লালমনিরহাট জেলার লালমনিরহাট সদর উপজেলার চার্চ অব গড উচ্চ বিদ্যালয় থেকে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে পাশ করেছেন। লালমনিরহাটের হাড়িভাঙ্গা আরডিআরএস বাংলাদেশ এর আরডিআরএস কোর কম্প্রিহেনসিভ প্রোগ্রামের দৃষ্টি প্রতিবন্ধী পুনর্বাসন কেন্দ্রে শ্রুতি লেখকের সহায়তায় পড়াশোনা এবং অন্য শিক্ষার্থীর সহযোগিতা নিয়ে পরীক্ষা দিয়ে জিপিএ ৩ দশমিক ৮৯ পেয়ে ‘এ-‘ গ্রেডে উত্তীর্ণ হয়েছে খন্দকার নাবিলা তাবাসসুম এবং জিপিএ ৩ পেয়ে ‘বি’ গ্রেডে উত্তীর্ণ হয়েছে মুন্নী আক্তার।
খন্দকার নাবিলা তাবাসসুম: কুড়িগ্রাম জেলার রাজারহাট উপজেলার নাজিমখা এলাকার মোঃ আল-এমরান খন্দকার ও খন্দকার ফারজানা আফরিন-এঁর কন্যা খন্দকার নাবিলা তাবাসসুম। সে হাড়ীভাঙ্গা দরগারপাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পঞ্চম শ্রেণি এবং চার্চ অব গড উচ্চ বিদ্যালয় হতে অষ্টম শ্রেণি ও এসএসসি পাশ করেন। তিনি লেখাপড়া শেষ করে তাঁর মা খন্দকার ফারজানা আফরিনের মতোই মানুষ গড়ার কারিগর শিক্ষক হতে চান। পাশাপাশি কবিতা আবৃত্তি ও সংগীতচর্চাও চালিয়ে যেতে চান।
মুন্নী আক্তার: লালমনিরহাট জেলার পাটগ্রাম উপজেলার বুড়িমারী ইউনিয়নের উফারমারা এলাকার মোঃ আফার উদ্দিন ও মোছাঃ নাছিমা বেগম-এঁর কন্যা মুন্নী আক্তার। সেও হাড়ীভাঙ্গা দরগারপাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পঞ্চম শ্রেণি এবং চার্চ অব গড উচ্চ বিদ্যালয় হতে অষ্টম শ্রেণি ও এসএসসি পাশ করেন। তিনি রবীন্দ্র, নজরুল ও আধুনিক সংগীত পরিবেশন করে পুরস্কৃত হয়েছেন। তিনিও বড় হয়ে শিক্ষক হতে চান।
খন্দকার নাবিলা তাবাসসুম ও মুন্নী আক্তার যথাক্রমে ১০/১১বছরের বেশি সময় ধরে বে-সরকারি উন্নয়ন সংস্থা আরডিআরএস বাংলাদেশ পরিচালিত লালমনিরহাট জেলা শহরের পাশে হাঁড়িভাঙ্গা এলাকায় অবস্থিত দৃষ্টি প্রতিবন্ধী পুনর্বাসন কেন্দ্রের আবাসিক ছাত্রী ছিলেন।
পুনর্বাসন কেন্দ্রটির অ্যাডমিন এন্ড আউটরিচ অফিসার প্রদীপ কুমার রায় বলেন, শুধু পড়াশোনায় নয়, অদম্য মেধাবী ও দৃষ্টি প্রতিবন্ধী খন্দকার নাবিলা তাবাসসুম ও মুন্নী আক্তার কবিতা আবৃত্তি ও সংগীতচর্চায় সুনাম অর্জন করেছেন।
খন্দকার নাবিলা তাবাসসুম ও মুন্নী আক্তার বলেন, দুচোখে আলো নেই, তাতে কি? শিক্ষা ও সংগীতের মাধ্যমে আমরা অন্তরের আলোয় আলোকিত হতে চাই। আমরা সাধ্যমতো সেই চেষ্টা করছি।
দৃষ্টি প্রতিবন্ধী খন্দকার নাবিলা তাবাসসুম ও মুন্নী আক্তার-এর উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ কামনা করেছেন চার্চ অব গড উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ সহিদার রহমান ও ইংরেজি বিভাগের সহকারী শিক্ষক পার্থ সারথি আচার্য।
উল্লেখ্য যে, লালমনিরহাটের হাড়িভাঙ্গা আরডিআরএস বাংলাদেশ এর আরডিআরএস কোর কম্প্রিহেনসিভ প্রোগ্রামের দৃষ্টি প্রতিবন্ধী পুনর্বাসন কেন্দ্রে দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের জন্য সীমিত আসনে ভর্তির সুযোগ রয়েছে মর্মে জানা গেছে।